by Dwipeer Alo on Sunday, June 26, 2011 at 3:39pm
প্রকৃতির অপরূপ মায়াবীর চাদরে ঢাকা সবুজ, শ্যামল, মনোমুগ্ধকর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমারোহে ভরপুর দ্বীপের রানী-খ্যাত সন্দ্বীপ। নানা জাতের পাখি, মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত এ দ্বীপ। নারকেল, সুপারি, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারসসহ মৌসুমি ফলের গাছে ভরা সন্দ্বীপের প্রতিটি বাড়ির বাগান আর পতিত জায়গাজমি। গাছের ডালভর্তি প্রকৃতির অপার দান পাকা ফল। পুকুরভর্তি মাছ। কারুকার্যে খচিত নয়নাভিরাম বাড়িঘর, সুদৃশ্য শানবাঁধানো ঘাট। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এলাকাজুড়ে জারি গান, কবিয়াল গান আর মারফতি গানের আয়োজন। হাটবাজারগুলোতে আছে কুস্তি প্রতিযোগিতা। আরণ্যক সৌন্দর্যের টানে বহুকাল ধরে সৌন্দর্যপ্রেমী প্রভাবশালী পর্যটকদের আগমন ঘটেছিল। একসময় পীর-আউলিয়া এবং রাজা-মহারাজাদের স্বর্গরাজ্য ছিল এই দ্বীপ। এখনও সমন্বিত পরিকল্পনা আর সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সন্দ্বীপকে গড়ে তোলা যায় দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে।
সৌন্দর্যের যাবতীয় আয়োজন রয়েছে এই দ্বীপে। নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়ে দ্বীপের চারপাশে। নদী কিংবা সাগরের পানিতে সকাল-বিকাল সূর্যের আলো অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। নদীতটের চিকচিক বালিতে সূর্যের আলো তৈরি করে মোহনীয় পরিবেশ। স্বর্ণালি স্বপ্নের মতোই অপরূপ এ দ্বীপ বর্ণিল শোভায় ঘেরা। এলাকাজুড়ে ছোট ছোট নৌকা চলছে বড় বড় ঢেউয়ের তালে। জাল ফেলে রাতদিন মাছ ধরছে জেলেরা। সাগর আর নদীর তীরে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সন্ধ্যার পরিবেশ হয়ে ওঠে সত্যিই দারুণ উপভোগ্য। দেখা যায়, সমুদ্রগামী জেলেদের জীবনসংগ্রাম।
সন্দ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো যথেষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে সন্দ্বীপে। অপার সম্ভাবনাময় সন্দ্বীপের সমুদ্রসৈকত সম্পূর্ণটাই যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে মুখর হয়ে উঠতে পারে সন্দ্বীপ। এখানকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক শোভার কোনো তুলনা নেই। পর্যটনের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে একদিন সন্দ্বীপ বিশ্বসেরা পর্যটন নগরীগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। এতে ভাগ্য বদলে যেতে পারে এলাকার মানুষের।
চট্টগ্রাম থেকে খুব সহজেই সন্দ্বীপ যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে একাধিক স্টিমার নিয়মিত সন্দ্বীপে চলাচল করে। সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, বাড়বকুণ্ড, ফকিরহাট অথবা কুমিরা থেকে প্রতিদিন অনেক লঞ্চ, স্পিডবোট সন্দ্বীপে যাতায়াত করে। স্টিমারে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা লাগলেও লঞ্চে যাওয়া যায় মাত্র এক ঘণ্টায়। স্পিডবোটে লাগে মাত্র দশ থেকে পনেরো মিনিট। বছরের ঝুঁকিপূর্ণ ঝড়ঝঞ্ঝার দিনগুলো বাদে বিশেষ করে শীত-হেমন্তে সন্দ্বীপে ভ্রমণ বেশ জমে ওঠে। এখানে গাড়ির ধোঁয়া নেই, ধুলাবালির আধিক্য নেই, শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী গাড়ির হর্ন নেই।
এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার বলেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হলে সন্দ্বীপে বিভিন্ন কলকারখানা, জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত্ সুবিধা, আবাসন, জমি উদ্ধার, লবণ চাষ, লবণ মিল, বরফ কল, মত্স্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, মত্স্য খাদ্য মিল ইত্যাদি গড়ে ওঠার অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে এই দ্বীপে। তিনি বলেন, সন্দ্বীপকে পর্যটনমুখী করতে সবার আগে দরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রথমেই যে কাজটি করা দরকার তা হলো, নোয়াখালী থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত ক্রসবাঁধ নির্মাণ করা। এছাড়া কুমিরা থেকে গুপ্তছড়া পর্যন্ত শক্তিশালী জেটি নির্মাণ করে যোগাযোগের সহজ বন্দোবস্ত করা। এছাড়া সি-ট্রাকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কাসেম হায়দার বলেন, এই দুই পথে সি-ট্রাক চলাচল করলে পর্যটকদের যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি নিয়মিত সি-ট্রাক চালু হলে এসব এলাকার লাখো মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের সূচনা হবে। এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে অবকাশ যাপনের জন্য এখানে নির্মাণ করতে হবে অত্যাধুনিক মানের কটেজ। এছাড়া কেবলকার, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ওয়াকওয়ে, রিসোর্ট কটেজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে এ দ্বীপকে পর্যায়ক্রমে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
বেসরকারি মেডিকেল ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকার উত্তরা মনসুর আলী মেডিকেলের অধ্যক্ষ ড. জামাল বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্কর্ষের যুগে এটি ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে—এটা মানা যায় না। ক্রসবাঁধ নির্মাণ ছাড়াও সন্দ্বীপ থেকে উড়িরচর, উড়িরচর থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত বেইলি ব্রিজ তৈরি করে ঢাকা থেকে সরাসরি যানবাহনে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় সন্দ্বীপ পৌঁছানো সম্ভব। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সন্দ্বীপকেও সেন্টমার্টিনের মতো আকর্ষণীয় পর্যটন দ্বীপে পরিণত করা যায়।
মনিকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আলম বলেন, সন্দ্বীপকে আধুনিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করতে হবে। সরকার বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তাদের টানে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্যও সরকারকে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, যাতে সন্দ্বীপে বিনিয়োগে তারা উত্সাহিত হন।
(courtesy by Daily Amardesh)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন