রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

সারিকাইতের জনদুর্ভোগ যেন নিত্য সঙ্গী

এক সময় যে সড়কটি দিয়ে দক্ষিন সন্দ্বীপের হাজার হাজার গরু মহিষ ছাগল ভেড়া আনা নেওয়া করা হত বিস্তৃন্য কালীর চর থেকে আর সেখানে সাগরের প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনে এলাকাবাসীর চলাচলের এক মাত্র সড়কটি বিলিন হয়ে রীতিমতো একটি বাশেঁর সাকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এই সড়কটির শেষ প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে বেড়ীবাঁধের সাথে, বেড়ীবাঁধের কিছু অংশ এখনো টিকে থাকলেও মানুষ চলাচলের রাস্তাটি বিলিন হয়ে গেছে প্রতিদিন এর পাশ্ববর্তী খালের জোয়ারের তীব্র স্রোতে

•• সারিকাইত ইউনিয়নের চৌকাতলী ৬ নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার খা সড়কের শেষ প্রান্ত থেকে ছবিটি তুলেছেন কাজী মোমিনুল হক মিলাদ

কুমিরা ঘাটের ইজারা দৈনিক ২ লক্ষ ৩ হাজার টাকা !!!

"স্পীড বোডের ভাড়া কমানো হবে বলছে ইজারাদার"

নিজস্ব প্রতিবেদন :
সন্দ্বীপের অন্যতম নৌঘাট কুমিরা গুপ্তছড়া রুট গত কয়েক বছর ধরে সীতাকুণ্ডের জনৈক রাজা কাশেমের কাছে ইজারা থাকলে ও এবার ইজারার দৌড়ে এগিয়ে গেল সন্দ্বীপের কিছু ব্যবসায়ীরা, এবার ইজারা প্রাপ্তিতে কাগজে কলমে মোঃ জয়নাল আবেদিন নামে জনৈক এক ব্যাক্তির নাম থাকলেও মুলত এর নেপথ্যে আছেন বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইজারাদার মাঈনুদ্দীন মিশন। তাও আবার আগের ইজারা মুল্যের ছেয়ে প্রায় ৩ গুন মুল্য বেশি দিয়ে নিয়ে নিয়েছেন সাবেক এই ইজারাদার। এবারের ইজারার দৌড়ে রাজা কাশেম থাকলেও তার ছায়া হিসেবে আরো একজন ছিলেন সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের জনৈক আনোয়ার হোসেন নামে এক ঘাট ব্যবসায়ী। এবার ঘাটের ইজারা মুল্য সর্বোচ্চ হাকা হয়েছে দুই লক্ষ তিন হাজার টাকা (সরকারি ভ্যাট, শুল্ক সহ) এই বিশাল অংকের ইজারা মুল্য দিয়ে ঘাট সন্দ্বীপের লোকেরা পেলেও প্রশ্ন রয়ে গেছে যাত্রীদের মানসম্মত সেবা আর যুক্তিগত ভাড়া নিয়ে। সন্দ্বীপের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা আর নাগরিক সুযোগ সুভিদার অন্যতম চাহিদা এই নৌরুটের দুর্ভোগ লাগভ আর যাতায়াতের সহনীয় ভাড়া নির্ধারণ নিয়ে আমরা সন্দ্বীপ বাসীর ব্যানারে গত কয়েক মাস যাবত নানা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল সন্দ্বীপের মানুষ।আর এই আন্দোলন কে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে জেলা পরিষদ আবারও অতি উচ্চ মুল্যে ইজারা দিল সন্দ্বীপের অন্যতম এই নৌঘাট টি। ইজারার এতো বেশি মুল্য দিয়ে ঘাট নেওয়ার কারন জানতে চাইলে ইজারাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী মাঈনুদ্দীন মিশন দ্বীপের আলোকে জানান দীর্ঘ দিন ধরে সন্দ্বীপের এই ঘাটটি রাজা কাশেমের হাতে থাকার কারনে তার ইচ্ছেমত সে ভাড়া বাড়িয়ে সন্দ্বীপের মানুষের সাথে জুলুম নির্যাতন করে যাচ্ছে আমরা এর থেকে সন্দ্বীপের মানুষ কে মুক্তি দিতে আর উপযুক্ত ভাড়ায় মানসম্মত সেবা দিতে উচ্চ মুল্যে প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে এই ঘাটটি নিয়েছি। শুধুমাত্র সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের কথা চিন্তা করে আমরা স্পীড বোডের ভাড়া বর্তমানের ছেয়ে আরো ১০০ টাকা কমিয়ে আনব, দুই দিকে যাত্রী পরিবহনের জন্য সার্ভিসের পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে এছাড়া সন্দ্বীপবাসীর মৃত লাশ পরিবহনের জন্য আমাদের সার্ভিস গুলো সম্পুর্ন ফ্রি থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি সন্দ্বীপের মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে এই জন্য যে আমরা সন্দ্বীপের মানুষের দুর্ভোগ লাগব করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এইতো গেল ইজারাদারের কথা এই ঘাটটির এমন উচ্চ মুল্যের ইজারার কারনে সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষের শঙ্কা আদৌ কতটুকু মানসম্মত সেবা আর উপযুক্ত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করতে পারবে তার প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়।

কাজী আফাজ উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

গতকাল সকাল ১০ টায় কাজী আফাজ উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের উদ্দ্যেগে স্কুল প্রাঙ্গণে এক ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য মাষ্টার কাজী ছারেমুল হকের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাষ্টার গাজী আবুল কাশেম, কাজী আব্দুল ওয়াছেক, কাজী রেজাউল কবির, মাষ্টার মোঃ জামাল উদ্দিন, মাষ্টার বদরুজ্জা তছলিম, বাবু রতন কুমার মিত্র, বাবু নারায়ন চন্দ্র, মাষ্টার গাজী রেফায়েত উল্ল্যা মাষ্টার মোঃ ওমর ফারুক । এছাড়াও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী পরিষদের পক্ষে থেকে বক্তব্য রাখেন মোঃ আনোয়ার হোসেন, কাজী মুসলিম উদ্দিন, কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল, বাসু চন্দ্র দেব, মোঃ মাহমুদুল হাসান শিকদার, মোঃ মনির হোসেন , ফরিদা বেগম, কাজী মেহরাজুল ইসলাম, শ্যামল চন্দ্র দত্ত, কাজী মোঃ ফরহাদ, কাজী কাইসার হামিদ মেহরাজ, আমিনুর রসুল, কাজী আয়াত উল্ল্যা সাঈদী, কাজী আরাফাত মুন্না, নিজাম উদ্দিন বাবু, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, কাজী তাহমিদ হাসান, কাজী মোস্তাফা হাসান তুশার, কাজী সুহেদা বেগম, কাজী রহমতুল ইসলাম মোঃ ইউছুপ প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে দুপুরের সময় এক প্রীতি ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকাল ২-৩০ মিনিট থেকে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক পর্বে গান কবিতা আবৃত্তি আর নাচের ছন্দে কাজী সায়েদুল কবির জিহানের পরিচালনায় বেশ কয়েকটি মঞ্চ নাটক অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল ৫ টা থেকে প্রাক্তন ছাত্রবৃন্দের অংশগ্রহনে স্কুল মাঠে এক প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।  খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)u

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

দক্ষিণ সন্দ্বীপ সারিকাইত ইউনিয়নের এর ঐতিহ্যবাহী জমিদার পুলিন চন্দ্র গুহের জমিদার বাড়ী


দক্ষিণ সন্দ্বীপ সারিকাইত ইউনিয়নের এর ঐতিহ্যবাহী জমিদার পুলিন চন্দ্র গুহের জমিদার বাড়ী। বাড়ীটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন পুলিন চন্দ্র গুহের পিতা প্রাণ হরি গুহ। তিনি(১৩৪৮ সনে- বাংলা)সালে বাড়ীটি প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে দক্ষিন সন্দ্বীপে বিট্রিশ আমলে জমিদারি প্রথা চালু করেন সন্দ্বীপের এই বিখ্যাত জমিদার | সন্দ্বীপের জমিদারি প্রথার এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি এখন কালের গর্বে হারিয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে | দক্ষিনে ক্রমাগত সাগরের ভাঙ্গনে যেকোন সময় সন্দ্বীপের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শনের মতো এই স্থাপনাটি হারিয়ে যেতে বসেছে | খোজ নিয়ে জানা গেছে বংশগত পরম্পরায় এই জমিদার পরিবারের তেমন আর কেউ থাকেনা এই বাড়ীতে | অনেকে চলে গেছেন ভারতে | এখন পরিত্যক্ত এই বাড়ীতে তাদের নিকট আত্নীয় কিছু লোক বসবাস করেন | সন্দ্বীপের ঐতিহাসিক স্থাপত্য গুলোর মধ্যে এই বাড়ীটি তেমন পরিচিত না হলেও ইতিহাসের সংরক্ষনে এই বাড়ীটির নাম দেখতে চান স্থানীয় হিন্দু সমাজের নেতৃবৃন্দ |

ছবি (চেনা সমুদ্র) ©সারিকাইত সন্দ্বীপ

"ইসলাম সাহেবের খামার সন্দ্বীপের পুষ্টি যোগায়"

মাত্র দুটি পুকুর নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল নিশি গ্রীন ফিল্ডস লিমিটেডেএর। আজ সেই খামার ৩৩টি পুকুর, ৩০০ গরু আর প্রায় দেড় হাজার রকমারি গাছের সমন্বয়ে বিপ্লবই ঘটিয়ে ফেলেছে সন্দ্বীপে। বলা হয়ে থাকে সন্দ্বীপের পুষ্টি চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ হয় এই খামার থেকে। সন্দ্বীপ তো বটেই এখানকার কর্মকর্তারা এই ইসলামের সাহেবের খামার চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় খামার হিসেবে দাবি করেন। খামারের ম্যানেজার অসীম সেন জানান, পৌরসভার হারামিয়া অংশে ৭০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠা এই খামারের পুকুর থেকে গড়ে প্রতিদিন দেড় টন মাছ আহরণ করে বিক্রি করা হয়। বছরে প্রায় সাড়ে ৫শ টন মাছ ধরা হয় এই খামারের ৩৩টি পুকুর থেকে। মাছের মধ্যে রুই, কাতাল, তেলাপিয়া, মৃগেল, পাঙ্গাস, গ্রাসকার্প, কার্প ও ব্রিগেড প্রজাতির মাছ রয়েছে। পাইকাররা নিজেরাই এসে এখান থেকে মাছ নিয়ে যায়। গরুর খামারে আছে প্রায় ৩০০ গাভী, বাছুর আর ষাঁড়। প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ নিয়ে যায় পাইকাররা। এছাড়া পুরো খামারজুড়েই রয়েছে প্রায় দেড় হাজার গাছ। এরমধ্যে বেশিরভাগ নারিকেল প্রজাতির। এছাড়া লিচু, সফেদা, কাঠাল, সুপারি, কামড়াঙ্গা, হরিতকি ও বেলগাছ। এই বিশেষত্ব হচ্ছে এখানকার কোন জিনিসই সন্দ্বীপের বাইরে যায় না। সন্দ্বীপের চাহিদাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। সন্দ্বীপে এতবড় খামার গড়ার পেছনে রয়েছে তার আবেগের সম্পর্ক। এ প্রসঙ্গে নিশি গ্রীন ফিল্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, সন্দ্বীপকে আমি খুব ভালোবাসি। এখানেই আমার বাবা-মায়ের কবর। খামারের সূত্রেই হয়তো আমার ছেলেমেয়েরাও এখানে আসবে। আসলে যারা ছোটবেলা থেকে আমাদের কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে তাদের সাপোর্ট দেয়ার জন্যই এই খামার গড়ে তোলা হয়েছে। সন্দ্বীপের পুষ্টি চাহিদার ৪০ শতাংশ পূরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। তবে অনেকেই এ কথা বলে। ৭০ একরের এই খামারের একটা অংশজুড়ে রয়েছে সবজীর বাগান। যেখানে শীতকালীন প্রায় সব ধরনের শাকসব্জীর চাষই করা হচ্ছে। ম্যানেজার অসীম জানান, প্রতিদিন শুধু ৫০০ টি লাউ বিক্রি করা হয়। আর পুরো খামারটি দায়িত্বে আছে ১৪ জন।

"মানচিত্র থেকে ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ - সন্দ্বীপ হারিয়ে যাচ্ছে"

বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে মেঘনার মোহনায় অবস্থিত বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ- সন্দ্বীপ । পঞ্চদশ শতাব্দির ৬০০ বর্গমাইলের ঐতিহ্যময় এ বিশাল ভুখন্ডটি অবহেলা, অনাদর আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে এখন মাত্র ৮০ বর্গমাইলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপে পরিণত হয়েছে। সে সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে গৃহহারা, সম্পদহারা। এই হারানোর বেদনা কতো যে গভীর তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে। সর্বস্বহারা কিছু মানুষ তাদের বুক জুড়ে জমে থাকা কষ্টের কথাগুলো বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন- ‘চোখ ধাধানো ফুলের-ফলের বাগান, বাড়ির সদর দরজা থেকে শুরু করে আঙ্গিনায় বিভিন্ন ফুলের গাছ সোভা পেত সন্দ্বীপের প্রতিটি বাড়িতে। এখন কেবল স্মৃতি.....। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, নারকেল ইত্যাদি ফলের গাছে ভরপুর ছিল প্রতিটি বাড়ির বাগান আর পতিত জায়গা-জমি। ফলের মৌসুমে বাগানগুলোতে এক অসাধারন দৃশ্যের অবতারনা হতো। গাছে গাছে, ডালে ডালে শোভা পেতো নানা রঙ, নানা আকৃতির পাকা ফল। পাকা ফলের গন্ধে মৌ মৌ করতো চারিদিক। মাছে ভর্তি ছিল পুকুর-জলাশয়-খাল-বিল। বিভিন্ন কারুকার্যে খচিত নয়নাভিরাম বাড়ী-ঘর, সুদৃশ্য সান বাধানো ঘাট, সুপারী এবং নারকেলের ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। এসব অমলিন স্মৃতি ভুমি হারা সন্দ্বীপবাসি আজীবন বয়ে বেড়াচ্চে। সন্দ্বীপে ছিল বেশ কয়কটি প্রথম শ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কারগিল স্কুল, মডেল স্কুল, আব্দুল বাতেন সরকারী কলেজ সহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্কুল-কলেজ, এসব প্রতিষ্ঠানের কৃতি ছাত্র-ছাত্রীরা এখন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। প্রতিটি স্কুলে এবং কলেজ সংলগ্ন বিশাল খেলার মাঠ যেখানে সব বয়সী মানুষ ফুটবল, হা-ডু-ডু সহ বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতো, পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের আড্ডা হতো বিরামহীন। প্রকৃতির খেয়ালের কাছে হার মেনে আর আমাদের অদূরদর্শীতা ও অমনোযোগীতার কারনে সন্দ্বীপবাসীরা দিনে দিনে সব হারিয়ে এখন স্মৃতি সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। জারি গান, কবির গান ছাড়াও কুস্তির প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো বিভিন্ন হাটবাজারে। রাতভর উপভোগ করতো সন্দ্বীপের সহজ সরল মানুষগুলো। স্মৃতি হাতড়িয়ে নিরবে নিভৃতে অঝোরে কান্নাএবং বিলাপ করা ছাড়া সন্দ্বীপের নিঃশ্ব মানুষগুলোর আর কিইবা করার আছে। পীর আওলিয়াদের আস্তানা ছিল সন্দ্বীপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সৌন্দর্যপ্রেমী প্রভাবসালীদের পছন্দের তালিকায় ছিল এই সন্দ্বীপ। তারা স্বপরিবারে ভ্রমনে আসতেন চোখ ধাধানো এই দ্বীপে। কেউ কেউ আবার স্বপরিবারে থেকে গেছেন এখানে। রাজা-মহারাজাদের স্বর্গ রাজ্য ছিল এই দ্বীপ। তারা বিভিন্ন সময় এই দ্বীপে শাসন কার্য পরিচালনা করেছে। তাদের মধ্যে দিলাল রাজা ছিলেন অন্যতম। অসাধারণ ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে গেছে সন্দ্বীপবাসীর চোখের সামনে। নিজের বাবা-মাকে হারানো যেমন কষ্টের, তেমনি কষ্ট বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছে সন্দীপবাসী। কেবল বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সন্দ্বীপের মানুষ । ভাঙ্গনের কবলে পড়া অনেকেই চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ একসময় এই মানুষগুলোর ছিল বিশাল বাড়ি, গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। সুখে-শান্তিতে ভরে থাকতো তাদের সংসার। এখন কেবল তাদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়েছে হৃদয় নিংড়ানো দীর্ঘশাস। তাদের দিকে ফিরে তাকানোর যেন কেউ নেই। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! তারা যেন চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তাদের বুকে জমে থাকা কষ্টগুলো সামান্য নিবারনের আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। চোখের সামনে যখন ভেসে ওঠে সাজানো সংসার, সাজানো বাড়ি, গোছানো বাগান, সোনালী ধানে ভরপুর দিগন্ত বিস্তৃত জমিগুলো সমুদ্রের কড়াল গ্রাসে বিলিন হয়ে যাচ্ছে, তখন নিজের অজান্তে চোখজোড়া জলে ভিজে যায়। শুধু অতীতে নয়, এ ভাঙ্গন বর্তমানেও চলছে। প্রতিবছরেই ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেক পরিবার নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে। হারানোর বেদনা যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তির এ যুগে, গনতন্ত্রের এ যুগে ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন এই দ্বীপটি উত্তাল মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে। কারো যেন কোন মাথা ব্যথা নেই! এ কি মেনে নেয়া যায়? ১৯৯১ সালের প্রলয়:করী ঘূর্ণিঝড়ে সন্দ্বীপের মানুষগুলো যেভাবে প্রকৃতির নির্মমতার শিকার হন তার আর্থসামাজিক ক্ষতি ও মর্মান্তিক স্মৃতি সন্দ্বীপবাসীকে আজোও কুরে কুরে খাচ্ছে। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। ঘূর্ণিঝড়ে স্বর্বস্বহারা এক অশিতিপর বৃদ্ধের কাছে সেদিনের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলেন। বললেন---‘২৯ এপ্রিল রাত দশটা। মুহুর্তেই থমকে গেল সব। কেঁপে উঠল পুরো সন্দ্বীপ। চৌচির হলো পথঘাট, বাড়ি, বিদ্যালয়,দোকানপাট। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রাণ হারাল শত শত মানুষ! সমুদ্র থেকে ধেয়ে এল দৈত্যের মতো বিশাল আকৃতির ভয়ংকর সব ঢেউ। বিভীষিকাময় সেই রাতের শেষে মানুষের আর্তচিতকারে আর আহাজারিতে ভরে গেল পুরো সন্দ্বীপের আকাশ। বেচে যাওয়া মানুষগুলো এ ধ্বংসযজ্ঞের পর চিনতে পারছিল না বদলে যাওয়া নিজেদের গ্রামটিকে। হুশ ফিরতেই সবাই খোজা শুরু করল আপনজনদের । ভয়ঙ্কর ঝলোচ্ছাসের নির্মম থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরো সন্দ্বীপ। পথের উপর পাশাপাশি ঠাই নিয়েছে মরা মানুষ, গরু, ছাগল, হাস, মুরগী, নৌকা, লঞ্চ, বাড়ি-ঘড়, গাছ-পালা, আরও কত কি! কাদামাখা পানিতে ঢেকে গেছে চারপাশ। যত্রতত্র পড়ে আছে মৃতদেহ। বেশিরভাগ লাশের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ত্রানকর্মীরা খাবার আর পানি দিয়ে সাহায্য করছিলেন নিজেদের সাধ্যমতো। একের পর এক হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছিল সন্দ্বীপের আকাশে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের সে কী করুণ আকুতি! কথা বলতে বলতে বৃদ্ধের চোখ ভিজে গেল। মুহুর্তেই তিনি চোখ মুছে আবার শুরু করলেন। ......বিভিন্ন বাড়ির চালে লাল পতাকা পত পত করে উড়তে দেখা যেত। আকাশপথে হেলিকপ্টারে ত্রাণ নিয়ে আসা মানুষদের চোখে পড়ার জন্যই এমন ব্যবস্থা’। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে চলতে থাকে মানুষের বিলাপ। প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকে কাতর তারা। প্রকৃতির এই নির্মমতা যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তারা কিভাবে ভুলবেন তাদের স্বজন হারানোর ব্যথা? তারা কিভাবে ভুলবেন তাদের সাজানো সংসারের স্মৃতিটুকু? না, সন্দ্বীপবাসীর হৃদয় থেকে এই ক্ষত কখনও মুছবে না-তা মোছার নয়। এরকম হাজারো কষ্ট বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছে সন্দ্বীপবাসী। কিন্তু তারা দমবার পাত্র নয়। বারবার হোচট খাচ্ছে কিন্তু ধরাশায়ী হবার পাত্র নয় এই দ্বীপের স্বর্ণালী ঐতিহ্যের ধারক বাহকরা। তাদের ঐতিহ্যগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও মন থেকে বিলীন হয়ে যায়নি। সন্দ্বীপের মানুষ দেশে এবং দেশের বাইরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছেন। সরকারি এবং বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে তাদের বীরদর্পে পদচারনা জানিয়ে দিচ্ছে সন্দ্বীপবাসী প্রাকৃতিক কষাঘাতে বার বার জর্জরিত হলেও প্রবল প্রতিকুলতার মাঝেও অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছানো যায়। বর্তমানে এই দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় চার লাখ। তার মধ্যে প্রায় এক লাখ লোক বেড়িবাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। আরো প্রায় দুই লাখ লোক নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্বাস্তুর মতো জীবনযাপন করছে। এত বিপদের মধ্যেও সন্দ্বীপবাসী কর্মোদ্দীপনায় উজ্জীবিত। স্ব-উদ্যোগে তারা প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জীবন ও জীবিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিচ্ছে। বিদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। তাদের এ অবদান কোনোপ্রকারে খাটো করে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশে সম্ভবত অন্য কোনো উপজেলায় এর চেয়ে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী লোকবল নেই। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু ই ঐতিহ্যবাহী দ্বীপটিকে নিয়ে ভাবার যেন কেউ নেই। সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ক্রসড্যাম নির্মানের মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপকে রক্ষা করার। একমাত্র ক্রসড্যাম নির্মাণ করেই সন্দ্বীপের অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তা ছাড়া ক্রসড্যাম নির্মিত হলে সন্দ্বীপ মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে, জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি হবে এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে। ১৯৭৪ সালে নেদারল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভাঙন রোধের জন্য সম্ভাব্য রিপোর্টসহ একটি সুপারিশমালা পেশ করে। তখন ব্যয় ধরা হয় পৌনে চারশ’ কোটি টাকা। এ ক্রসবাঁধ নির্মাণের জন্য নেদারল্যান্ড, সুইডেন ও কানাডাসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশ ও দাতা সংস্থা অর্থ প্রদানে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, চার দশকে বহু সরকারের পরিবর্তন হলেও বাঁধ নির্মানের ব্যপারে কেউ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সবশেষে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ-উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রসড্যামের গাণিতিক মডেল হালনাগাদ করা হয়েছে। কিন্তু আদৌ এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কিনা তা সন্দেহের অবকাশ আছে। শুধু সন্দ্বীপবাসীর সম্পদ বাঁচাবার জন্য নয়, এদেশের একটি ঐতিহ্যময় জনপদকে টিকিয়ে রাখা ও মানুষের অস্তিত্বের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার জন্য সন্দ্বীপ রক্ষায় সম্ভাব্য সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।

সন্দ্বীপের ইতিহাস বাংলাদেশের ৪৬০টি উপজেলার অন্যতম একটি উপজেলা সন্দ্বীপ। প্রমত্তা মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এ উপজেলাটি বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত এই সন্দ্বীপ উপজেলার যেমন রয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তেমনি দ্বীপটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়। সন্দ্বীপের উর্বর মাটি মূল ভূখ-ের মানুষকে সোনালী শস্যের ইশারায় ডেকে আনে; আবার সাগর-নদীর এ কূল ভেঙে ও কূল গড়ার সর্বনাশা খেলা তাকে নতুন গৃহের সন্ধানে দ্বীপত্যাগ করতেও বাধ্য করে। নৌ-যোগাযোগব্যবস্থা ও নান্দনিক ঐশ্বর্যের কারণেও এ দ্বীপটির প্রতি বিদেশি শাসকদের আলাদা নজর ছিল। যে কারণে দীর্ঘ সময় দ্বীপটি মগ-পর্তুগীজ ও অন্যান্য বিদেশিদের দখলে ছিল। মোঘল আমলে সন্দ্বীপ, হাতিয়া, বামনী ও সাগরদিহি নিয়ে প্রায় স্বাধীন সন্দ্বীপ পরগনাও গঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও নানা-জাতির মিলনমেলায় এ দ্বীপের সংস্কৃতি ঋদ্ধ হয়েছে। সন্দ্বীপ উপজেলার অতীত ও বর্তমান ইতিহাস নিয়ে সম্প্রতি সন্দ্বীপের ইতিহাস নামে গবেষণামূলক বই লিখেছেন সন্দ্বীপের সন্তান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. রাজীব হুমায়ুন। ভৌগোলিক পরিবেশ, লোক পরিচিতি, রাজনৈতিক ইতিহাস, অর্থনৈতিক ইতিহাস, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা, শিক্ষার ইতিহাস, ধর্ম ও সম্প্রদায়, ভাষা-বৈচিত্র্য, সাহিত্য ও শিল্পচর্চা, জীবন যাপনসহ একাদশটি অধ্যায়ে এ উপজেলার সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ অধ্যায়ে সংযুক্তি আকারে বর্তমানে সন্দ্বীপের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, জীবন যাপনসহ নানাবিধ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বইটি পাঠে সন্দ্বীপ উপজেলার নামকরণের অতীত ইতিহাস থেকে শুরু করে বিবর্তনের ধারায় সন্দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান, শিক্ষা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এ উপজেলায় বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা, ধর্ম-দর্শনসহ যাবতীয় বিষয়াবলী ইতিহাসের আলোকে তুলে ধরেছেন লেখক। প্রয়োজনীয় ফুটনোটও সংযোজন করেছেন লেখক-গবেষক ড. রাজীব হুমায়ুন। বইটি পাঠে জানা যায়, সন্দ্বীপের অর্থনৈতিক ইতিহাস মূলত ভূমিনির্ভর ইতিহাস। এ দ্বীপের নতুন উর্বর অনাবাদী ভূমিই মূল ভূখ-ের মানুষদের আকর্ষণ করেছিল। সুতরাং ভূমি নির্ভরতা ও চাষাবাদের কারণেই এ দ্বীপবাসীর মূল পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পশুপালন পেশা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বীপবাসী বিভিন্ন পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। লেখক শিক্ষার ইতিহাস অধ্যায়ে সন্দ্বীপের অতীত থেকে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অনুপুঙ্খু আলোচনা করেছেন। অষ্টম/নবম শতক থেকে সন্দ্বীপে আরব বণিক ও ধর্মসাধকদের আগমন, মুসলিম শাসকদের শাসন, ফাতেখাঁ ও দিলাল রাজার সুদীর্ঘ শাসনকাল, চাঁদ খাঁ, আবু তোরাব চৌধুরী ও অন্যান্য স্থানীয় জমিদারদের জমিদারি আমলে সন্দ্বীপে শিক্ষার পরিবেশের পরোক্ষ প্রমাণ তিনি তথ্যভিত্তিক তুলে ধরেছেন। এ উপজেলার ইসলামী, সংস্কৃতি, নারী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাসহ যাবতীয় শিক্ষা পদ্ধতি তুলে ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আলোচনা করেছেন। এতে উপজেলার সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা মেলে। বইটিতে এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনযাপন, ভাষা, খাদ্যাভাস, ধর্মীয় মেলা, বিবাহ, সম্প্রদায়গত সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরিবেশগত বৈচিত্র্যসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ভাষার পার্থক্য নিরূপণ করা অনেকটা কঠিন হলেও গবেষক এ বইতে সেটি নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন। বইটি পাঠে জানা যায়, সাহিত্য ও শিল্পচর্চার ইতিহাসে সন্দ্বীপের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সবে কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি সাহিত্যের অতিপরিচিত এ বিপ্লবী পঙ্ক্তিমালার রচয়িতা কবি আব্দুল হাকিমের জন্মস্থান এ সন্দ্বীপের মাটিতে। এ ছাড়া নজরুল সহযোগী কমরেড মুজফফর আহমেদ, শক্তিচরণ চৌধুলী, অনঙ্গমোহন দাস, মোহাম্মদ আবদুল আলী,এস, এম, আবদুল আহাদসহ বাংলা সাহিত্যের অনেক শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকই সন্দ্বীপের সন্তান বলে বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সন্দ্বীপ ৬২ মৌজার দেশ বলে পরিচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন চরের সঙ্গে এ দ্বীপটি কোনো না কোনো ভাবে সম্পর্কিত। গবেষক ড. রাজীব হুমায়ুন উল্লেখ করেছেন, সন্দ্বীপের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে গড়ে ২০ মাইল এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে গড়ে ৫ মাইল। দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম উপকূলের দূরত্ব প্রায় দশ মাইল। লেখক সন্দ্বীপের উদ্ভিদ, শস্য, জমির প্রকৃতি, পানি, ফল, পশু-পাখি-কীটপতঙ্গ, মৎস্য সম্পদ, সরীসৃপ ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের তথ্যভিত্তিক উপাত্ত সংযোজন করেছেন এ বইতে। জানা যায়, সন্দ্বীপে পানি ওঠা বার্ষিক ব্যাপার। অতিবৃষ্টি সঙ্গে বাতাস হলেই এ দ্বীপে পানি উঠে যায়। সুতরাং দ্বীপবাসীকে প্রকৃতির বিরূপতার সঙ্গে লড়াই করেই এখানে টিকে থাকতে হয়। লেখক উল্লেখ করেছেন, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে সিজার ফ্রেডরিকের জাহাজ ঝড়ে পড়ে ধ্বংস হলে তিনি সন্দ্বীপে আশ্রয় নেন। এর কিছুকাল পরে একইভাবে ঝড়ের কবলে পড়ে লা বস্নাঙ্ক সন্দ্বীপে উঠেছিলেন। লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে রয়েছে বাঙালির প্রাণের যোগ। এ ধারায় সন্দ্বীপের লোকজসংস্কৃতিও বেশ উজ্জ্বল। বইটিতে গবেষক এ উপজেলার লোকনাট্য, লোকসাহিত্য, সাইরগান, ছড়া, ভুনুতি, ধাঁধা, প্রবাদ-প্রবচন, ব্যঙ্গ-কৌতুক, বিয়ের গান, কিংবদন্তি ও জীবনযাপনের অনুষঙ্গ আহার, পোশাক-পরিচ্ছদ, অলঙ্কারের ব্যবহার, খেলাধুলা ইত্যাদি শ্রমনিষ্ঠভাবে তুলে ধরেছেন। সুতরাং সন্দ্বীপের ইতিহাস বইটিকে সন্দ্বীপ উপজেলার ঐতিহাসিক দলিল বললে বোধ করি ভুল হয় না। তবে বইটি পড়তে গিয়ে সূচিপত্রর প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার মনে হয়েছে। অধ্যায় ভিত্তিক সূচিপত্র সংযোজন করা হলে পাঠক আরো বেশি সাবলীল ভাবে বইটি পাঠ করতে পারত বলে মনে করি। সন্দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গবেষণারত তরুণ গবেষকদের কাছে এ বইটি অতি মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে। সন্দ্বীপের ইতিহাস বইটির বহুল প্রচার প্রত্যাশা করি। সন্দ্বীপের ইতিহাস রাজীব হুমায়ুন প্রকাশক : মিনি ওয়ার্ল্ড প্রকাশকাল : মে- ২০১২ মূল্য : ২৪০ টাকা

রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২

"জেলা পরিষদের উন্নয়নে বঞ্চিত সন্দ্বীপ "

নিজস্ব প্রতিনিধি : দ্বীপের আলো
দেশের মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এলাকা সন্দ্বীপবার বার বঞ্চিত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে । জেলা পরিষদ যেখানেতুলনামুলক­ ভাবে উন্নত জনপদ চট্টগ্রাম-১৪ এর অর্ন্তভুক্ত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বাস্তবায়ন করেছে ৮ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩১ হাজার টাকার ৪১১টি প্রকল্প।আর সেখানে চট্টগ্রাম-১৬(সন­­্দ্বীপ) আসনে ১১২টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দদিয়েছে ৩ কোটি ৬৯লক্ষ ৩ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ। দেশের নুন্যতম নাগরিক সুভিদা থেকে বঞ্চিত এই দ্বীপবাসীর সাথে ও চলছে জেলা পরিষদের এই বৈষ্যমের খেলা । অথচ প্রতি বছর শুধুমাত্র সন্দ্বীপের বিভিন্ন নৌ পথের ঘাট গুলো থেকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ আয় করছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ।