নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার
অর্ন্তগত নিঝুম দ্বীপ। একে 'দ্বীপ'
বলা হলেও এটি মূলত একটি 'চর'। নিঝুম
দ্বীপের পূর্ব নাম ছিলো চর-ওসমান।
ওসমান নামের একজন বাথানিয়া তার
মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম নিঝুম
দ্বীপে বসত গড়েন। তখন এই নামেই এর
নামকরণ হয়েছিলো। পরে হাতিয়ার
সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম
বদলে নিঝুম দ্বীপ নামকরণ করেন। মূলত
বল্লারচর, চর ওসমান, কামলার চর
এবং চুর মুরি- এই চারটি চর
মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ।
প্রায় ১৪,০০০ একরের দ্বীপটি ১৯৪০
খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। মাছ
ধরতে গিয়ে হাতিয়ার
জেলেরা নিঝুমদ্বীপ আবিস্কার করে।
পঞ্চাশের দশকের
মাঝামাঝি নিঝুমদ্বীপে জনবসতি শুরু
হয়। মূলত হাতিয়ার
জাহাজমারা ইউনিয়ন হতে কিছু
জেলে পরিবার প্রথম নিঝুমদ্বীপে আসে।
নিঝুমদ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর
ইছা মাছ (চিংড়ি মাছ)
ধরা পড়তো বিধায় জেলেরা এই দ্বীপের
নাম দেয় ‘‘ইছামতির দ্বীপ’’। এই
দ্বীপটিতে মাঝে মাঝে বালির
ঢিবি বা টিলার মত ছিল বিধায়
স্থানীয় লোকজন এই দ্বীপকে বাইল্যার
ডেইল বলেও ডাকতো।
কালক্রমে ইছামতি দ্বীপ
নামটি হারিয়ে গেলেও স্থানীয়
লোকেরা এখনো এই দ্বীপকে বাইল্যার
ডেইল বলেই সম্বোধন করে।
বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর
দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার
জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন
হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬
খ্রিস্টাব্দের
হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের
সংখ্যা ২২,০০০। আইলায় বেশ কিছু হরিণ
মারা গেলেও ধারনা করা হয় এখন নিঝুম
দ্বীপে ৪০ হাজারের বেশি হরিন আছে।
নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ
কেওড়া গাছের অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ
বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম
দ্বীপকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম
ম্যানগ্রোভ বন
বলে অনেকে দাবী করেন।
নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫
প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের
মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির
অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির
চর। জোয়ারের
পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়।
জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন
প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার।
এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের
মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫
বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯
ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের
জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময়
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন
অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ
কিনতে আসে।। এছাড়া শীত
কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম
দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত।
জেলেরা এই মাছ
ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।
শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২
সাগর কন্যা নিজুম দ্বীপের হাতছানি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন