বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

ইউনিক টেলেন্ট কম্পিটিশন-২০১২ সম্পন্ন



একটি জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা প্রয়াস এই শ্লোগানকে ধারন করে সন্দ্বীপের ১৪ টি হাই স্কুল ও মাদ্রাসার অংশগ্রহনে গত ১৫ মার্চ “সন্দ্বীপ ইউনিক সোসাইটির” আয়োজনে মুছাপুর বদিউজ্জামান হাই স্কুলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইউনিক টেলেন্ট কম্পিটিশন-২০১২। জ্ঞান পিপাসু স্কুল শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফ’র্ত অংশ গ্রহনে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে যথাক্রমে বাউরিয়া জি কে একাডেমী, দ্বীপবন্ধু মুস্তাাফিজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, জেবেননুর সুলতান উচ্চ বিদ্যালয়, মুছাপুর বদিউজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়, সন্দ্বীপ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব সন্দ্বীপ এনাম নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মগধরা উচ্চ বিদ্যালয়, সাউথ সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়, মাইটভাঙ্গা দ্বী-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সন্দ্বীপ কারামতিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, সারিকাইত মমতাজুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, দক্ষিন পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়, কাজী আফাজ উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,। টান টান উত্তেজনা আর মেধা মূল্যায়নের ভিত্তিতে উক্ত টেলেন্ট কম্পিটিশনে চ্যাম্পিয়ন টিম হওয়ার গৌরব অর্জন করে মুছাপুর বদিউজ্জামান হাই স্কুল, এবং রানার আপ টিম হওয়ার গৌরব অর্জন করে দক্ষিন পূর্ব সন্দ্বীপ হাই স্কুল, “সন্দ্বীপ ইউনিক সোসাইটির” প্রেসিডেন্ট কাজী কাইসার হামিদের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশমত আরা বেগম, মুছাপুর বদিউজ্জামান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহিম,আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন আবুল কাশেম হায়দার মহিলা কলেজের প্রভাষক মুকতাদের আজাদ খান প্রমুখ। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন জি কে একাডেমীর শিক্ষক বাবু বিধান চন্দ্র দাশ, সাউথ সন্দ্বীপ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: আয়ুব, কাজী আফাজ উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজী রেফায়েত উল্ল্যা খালেক। সংগঠনের কর্মকান্ড ও ভবিষৎ কর্মসূচী তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ ইউনিক সোসাইটির সাধারন সম্পাদক কাজী শিহাব উদ্দিন ও সদস্য কাজী তামিমুল হক। প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সন্দ্বীপের ১৫ টি হাই স্কুল ও মাদ্রাসা মধ্য থেকে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে একজন সেরা শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এছাড়া ও সন্দ্বীপ ইউনিক সোসাইটির “গরীব ও মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী কল্যান তহবিল” হতে মুছাপুর বদিউজ্জামান হাই স্কুলের ১৫ জন গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মাঝে পুরো বছরের শিক্ষা উপকরণ বিতরন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠান গুলোর সার্বিক সহযোগিতা করে তাকওয়া প্রপার্টিজ লি: এবং মিড়িয়া পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মাসিক সোনালী সন্দ্বীপ। (প্রেস বিজ্ঞপ্তি)

একদিকে প্রকৃতি যেমন গ্রাস করছে সন্দ্বীপকে, অন্যদিকে জলদস্যুতা ও সন্ত্রাস ম্রিয়মান করে দিচ্ছে সন্দ্বীপবাসীর সাফল্যের ইতিহাস।

দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর প্রায় দুই লাখই প্রবাসী। যার সিংহভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। নদী ও সাগরের ভাঙন-প্রবন এ দ্বীপের অধিকাংশই এখন সাগরের জলে হারিয়ে গেছে। তবু অদম্য মানুষগুলো সব হারিয়েও বাঁচার আশা ছাড়েনি। তারা পাড়ি জমিয়েছে চট্টগ্রামের হালিশহর, ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে। এসব মানুষ শিকড়ের টানে ফিরতে চায় প্রিয় মাতৃভূমিতে। কিন্তু সন্ত্রাস আর জলদস্যুর উৎপাতে তারা অসহায়।

সন্দ্বীপের সংসদ সদস্যের ভাষ্যমতে, দেশে প্রবাসীদের কাছ থেকে যে রেমিট্যান্স আসে তার ১১ ভাগই আসে সন্দ্বীপে। অথচ এখানকার মানুষ সবদিক থেকে অবহেলিত।

কয়েকজন স্কুলশিক্ষক জানালেন, একদিকে প্রকৃতি যেমন গ্রাস করছে সন্দ্বীপকে, অন্যদিকে জলদস্যুতা ও সন্ত্রাস ম্রিয়মান করে দিচ্ছে সন্দ্বীপবাসীর সাফল্যের ইতিহাস।

বাংলাবাজার এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে সাগরে বসতবাড়ি হারানো দেড় হাজার জেলে পরিবার। গভীর সাগরের বুকে মাছ ধরাই তাদের একমাত্র পেশা। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে তারা সাগরে যেতে পারছে না জলদস্যুর ভয়ে। এমনকি সন্দ্বীপে প্রবেশের ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও এসব সন্ত্রাসী জলদস্যুর হাতে। এখন নতুন ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে মাদকের ব্যবহার। ধুপেরখাল ঘাট, সোয়াখালি ঘাট, গুপ্তচরা ঘাট দিয়ে অবাধে আসছে হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ ইত্যাদি।

ফখর ইসলাম, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, সুফিয়ান, মহসিন, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজ সওদাগরদের মতো অনেকেই জানালেন, জেলেদের মধ্যেই আছে জলদস্যুদের এজেন্ট। এছাড়া সচ্ছল ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরাও কাজ করেন জলদস্যুদের এজেন্ট হিসেবে।

তারা বলেন, ‘কোস্টগার্ডকে এসব বললে কোনো কাজ হয় না। অনেক সময় কোস্টগার্ডের সামনেই নৌকা ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন কোস্টগার্ড উল্টো জেলে নৌকার লাইসেন্স পরীক্ষার নামে সময়ক্ষেপণ করে দস্যুদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা ও সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাজাহানের অভিযোগ, ‘শুনেছি প্রশাসন ও কোস্টগার্ড জলদস্যুদের সহায়তা করে।’

এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রধান ক্যাপটেন জাবেদ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ অঞ্চলে কে জলদস্যু আর কে সাধারণ জেলে তা বোঝা খুব কঠিন। তাছাড়া সব সময় জেলেরাও সঠিক তথ্য দেয় না। জলদস্যুদের সনাক্ত করতেই লাইসেন্স পরীক্ষা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবকে যে ধরনের ক্ষমতা দেওয়া আছে তাতে তারা যেভাবে অভিযান চালাতে পারে, আমরা সেভাবে পারি না। তবে সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে জলদস্যু দমনের চেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘কোস্টগার্ড অনেক সময় সোর্স ব্যবহার করে। সোর্স হয়ত জলদস্যু হতে পারে। কিন্তু তাদের নিয়ে যখন সবার সামনে যাওয়া হয়, তখন তো কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন না।’

এ বিষয়ে সকলের সাহযোগিতা চান তিনি।
(source:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

সন্দ্বীপের পশ্চিমে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ‘জাহাইজ্জার চর’ বর্তমানে জলদস্যুদের নেতৃত্বে আছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নিজাম চৌধুরী

সন্দ্বীপের পশ্চিমে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর ‘জাহাইজ্জার চর’। ১০ বছর আগে জেগে ওঠা এ চরের আয়তন আনুমানিক ২০০ বর্গ মাইল। যা প্রতিবছরই বাড়ছে। পুরো চরের ৯০ ভাগই ঘন ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। কেওড়া, গেওয়া, লোনা গাছের সঙ্গে আছে স্থানীয় জাতের কাঁটাজাতীয় ও গুল্ম জাতের গভীর প্যারাবন। জনমানবহীন এ জঙ্গলের মালিকানার দাবি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এবং নোয়াখালীর হাতিয়ার।

কিন্তু চরের চারপাশে কাদা এবং গাছের শুল থাকায় কোনো জেলার প্রশাসনই যেতে পারে না এ চরে। ফলে এ সুযোগ লুফে নিয়েছে এ এলাকার জলদস্যুরা। এ চরে সদরদফতর স্থাপন করে দস্যুরা শাসন করছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা জেলার বিস্তীর্ণ উপকূল ও সাগর এবং মেঘনার বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরাঞ্চল।

বর্তমানে জলদস্যুদের নেতৃত্বে আছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নিজাম চৌধুরী। তার বাহিনীর নাম নিজাম বাহিনী। এ বাহিনী এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে বয়ার চর, ঢালচর, উড়িরচর, ক্যারিং চর, চর বাসার, চর ইসলাম, চর কালাম, ঠাঙ্গারচর, নিঝুম দ্বীপ, চর এলাহী, সুবর্ণচর, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মনপুরাসহ চট্টগ্রাম, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

বাহিনীপ্রধান নিজামের ভাষ্য অনুয়ায়ী, বর্তমানে নিজামের আশ্রয়দাতা হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোহাম্মদ আলী।

মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে জলদস্যুদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, হাতিয়ার সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমসহ এ অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষরা। তবে চারদলীয় সরকারের আমলে ওই সংসদ সদস্যরা আগের বাহিনীগুলোকে মদদ দিয়েছে বলেও দাবি সাধারণের।

এ বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনী হিসেবে সন্দ্বীপের খোকাবাহিনীকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ আছে ফজলুল আজিম এমপি, মোস্তফা কামাল পাশা এমপি, সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, নোয়াখালীর সংসদ সদস্য একরামুল হক চৌধুরী, বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে টেলিফোনে বলেন, ‘আমি এখন নির্বাচনী এলাকায় আছি। তাই এ বিষয়ে এখন কথা বলা সম্ভব নয়। দুইদিন পর বিস্তারিত কথা বলব।’

বরকতুল্লাহ বুলু ও একরামুল হক চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি তিনি কল রিসিভ করেননি।

তবে ফজলুল আজিম এমপি অভিযোগ অস্বীকার করে মোহম্মদ আলীকেই জলদস্যুর গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জাহাইজ্জার চরের গহীনে রয়েছে নিজাম বাহিনীর সদর দফতার। বিদ্যুতের জন্য এখানে স্থাপন করা হয়েছে সোলার প্যানেল, সঙ্গে আছে জেনারেটর। সন্দ্বীপের সংসদ সদস্যের দাবি, এ চরে জলদস্যুদের কাছে আছে অত্যাধুনিক লেদ মেশিন। অস্ত্র তৈরির কারখানা। জলদস্যুদের আশ্রয় ও বিশ্রামকেন্দ্র, অস্ত্রাগার ও হাজতখানা।

গহীন জঙ্গলে এ সদরদফতর হওয়ায় ওপর থেকে হেলিকপ্টারেও এসব স্থাপনার অস্তিত্ব ঠাহর করা যায় না বলে দাবি হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ— প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি কেউই যেতে চান না এ চরে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধিকাংশেরই দাবি দুর্গম এলাকা হওয়ায় বিশাল এ অরণ্যে প্রবেশ কারো জন্যই সুখকর নয়। তাছাড়া এ চরের চারপাশের বেশিরভাগ অংশে এক থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর কাদা থাকায় অল্প সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের অভিযানও ফলপ্রসূ হয় না।

ভয়ংকর নিজাম বাহিনীর সদস্যরা এ চরে নৌপথে যাতায়াত করা ছোট নৌযান এবং নৌযানের মানুষদের আটক করে নিয়ে আসে চরের গহীনে। এরপর আটককৃতদের মোবাইল ফোন থেকে কল দেওয়া হয় আটককৃতদের পরিবারের কাছে। দাবি করা হয় বিপুল অংকের মুক্তিপণ। আটককৃতদের শরীর থেকে খুলে নেওয়া হয় কাপড়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে যে কোনো একজনকে দিয়ে পরিবারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় আটককৃতদের। এরপর বাকিদের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয় পরিবারের সদস্যরা।

এ কাজে মধ্যস্থতা করেন সন্দ্বীপ এবং হাতিয়ার জনপ্রতিনিধিসহ বিশিষ্টজনেরা। এইসব ভদ্র জলদস্যু এজেন্ট সম্পর্কে মুখ খোলেন না কেউই। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, স্থানীয় সাংবাদিক, প্রশাসন, জেলে সর্দার, দাদনদাতা, ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি ভুক্তভোগী জেলে, সবার মুখেই একই গল্প।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে চলাচলকারী মালবাহী (কার্গো) জাহাজের চলচলকারী রুট জাহাইজ্জার চর এবং চর ইসলামামের মধ্যকার সন্দ্বীপ চ্যানেল। এ পথে প্রতিদিন ৩ শতাধিক জাহাজ চলাচল করে। প্রতিটি জাহাজকেই নিজাম বাহিনীকে চাঁদা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

এ ছাড়া বঙ্গপোসাগরের মোহনা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার জেলেনৌকা এ এলাকায় মাছ ধরতে আসে। এসব নৌকাকে জলদস্যুদের কাছ থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করতে হয় স্পেশাল পাস। এ কাজে সহায়ক ভূমিকা রাখে স্থানীয় এজেন্ট এবং এক শ্রেণীর জেলে।

প্রায় সকলেরই ধারণা, এ এলাকায় কেবল জেলে এবং জাহাজগুলো থেকেই নিজাম বাহিনী প্রতিদিন তিন থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করে থাকে। পারমিট না নেওয়া সকল জেলেকেই আক্রমণে পড়তে হয় নিজাম বাহিনীর। এমন দুটি নৌকা এখনো আটক আছে জাহাইজ্জার চরে। সন্দ্বীপের বাংলাবাজার এলাকার জেলে জামসেদ সওদাগর এবং দিদার সওদাগর টাকা দিতে না পারায় তাদের নৌকা এবং ১২ জেলে আটক আছে নিজাম বাহিনীর কাছে।

একই সঙ্গে আটক নকুল জলদাস ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। তবে আটক থাকার সময়ে সইতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। নকুলকে ছাড়াতে মধ্যস্থতা করেন একজন জনপ্রতিনিধি। টাকা লেনদেন হয় সন্দ্বীপ পৌরসভা কমপ্লেক্সে।

সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাহাইজ্জার চর, উড়িরচর শুরু থেকেই জলদস্যুদের দখলে। এখানে প্রশাসন চলে না। হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী এদের নিয়ন্ত্রণ করেন। মেঘনার এ মোহনা থেকে জলদস্যুরা দৈনিক ৫ লাখ টাকা আদায় করে।’

তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের সবাই লিডারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্ধষ সন্ত্রাসী, পাহাড়ি দুর্বৃত্ত, পলাতক বিডিআর (বিজিবি) সদস্য, উপকূলীয় বিভিন্ন বিলুপ্ত বাহিনীর সদস্যরা এখন জাহাইজ্জার চরে নিজামের সঙ্গে আছে।’

নিজাম বাহিনীর এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘চরের চারপাশে আছে তাদের টলহল বাহিনী। এরা ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা নিয়ে জেলেবেসে টহল চালায়। চরের মধ্যে গাছের ওপর মাচা বেঁধে বানানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।’

নিজামের সেকেন্ড ইন কমান্ড বাহার কেরানী বলেন, ‘চৌধুরী সাবের জন্য জাহাইজ্জার চর সবচেয়ে নিরাপদ।’

তিনি বলেন, ‘এখানে বিস্তীর্ণ বন ও কাদা থাকায় প্রশাসন এবং প্রতিপক্ষ বাহিনী সহজে হামলা চালাতে পারে না। তাছাড়া কেউ এ চরে নামলে টহল বাহিনী এবং ওয়াচ টাওয়ারের সংবাদের ভিত্তিতে তা হেড কোয়ার্টারে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং চৌধুরীসাবসহ সবাই সহজেই পালাতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জাহাইজ্জার চরে বর্তমানে আমাদের ৫ লক্ষাধিক গরু ও মহিষ রয়েছে। সেগুলো রক্ষা করতেও আমাদের এখানে থাকতে হয়।’

নিজাম বাহিনীর হাতে বর্তমানে হাতিয়া থেকে ছিনতাই করা একটি অত্যাধুনিক স্পিডবোট, কয়েকটি ইঞ্জিননৌকা এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল রয়েছে। যা দিয়ে সহজেই গাঢাকা দেওয়া সম্ভব।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘এ চরে অভিযান চালানো একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার। ২০/৫০ জন ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে এদের ধরাও অসম্ভব। কেবলমাত্র এ ধরনের চরে একসঙ্গে সমন্বিত অভিযান চালিয়ে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

(source:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)